ঘুম, দার্জিলিং: পরিচয়, ইতিহাস ও আকর্ষণীয় স্থানসমূহ
ঘুম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার একটি ছোট্ট কিন্তু অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭,৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, যা ভারতের সর্বোচ্চ রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শীতল পরিবেশ এবং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জন্য ঘুম দার্জিলিং ভ্রমণে একটি অপরিহার্য স্থান।
ইতিহাস
ঘুমের ইতিহাস দার্জিলিং জেলার ব্রিটিশ শাসনের সাথে গভীরভাবে জড়িত। ১৯ শতকে ব্রিটিশরা এখানে চা বাগানের প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি পর্যটনের জন্য ঘুম এবং দার্জিলিংকে উন্নত করে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (DHR), যা এখন একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, ১৮৮১ সালে চালু হয় এবং এর একটি প্রধান স্টেশন ঘুম। এই স্টেশনটি দার্জিলিং টয় ট্রেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য।
প্রধান আকর্ষণসমূহ
১. ঘুম মনাস্টারি
- ঘুম মঠ (Ghoom Monastery) ১৮৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি যোগচেন বৌদ্ধধর্মের অনুসারীদের একটি প্রধান কেন্দ্র।
- এখানে মৈত্রেয় বুদ্ধের ১৫ ফুট উঁচু মূর্তি রয়েছে, যা এই মঠের প্রধান আকর্ষণ।
- মঠটি তিব্বতি সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য আদর্শ।
২. দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (DHR)
- টয় ট্রেনের যাত্রা: দার্জিলিং থেকে ঘুম পর্যন্ত টয় ট্রেনে যাত্রা একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। পাহাড়ি পথ, গভীর উপত্যকা এবং হিমালয়ের দৃশ্য এই যাত্রাকে স্মরণীয় করে তোলে।
- ঘুম রেলওয়ে স্টেশন: ভারতের সর্বোচ্চ স্টেশন হওয়ার জন্য এটি বিখ্যাত।
৩. বাতাসিয়া লুপ
- ঘুমের কাছেই অবস্থিত এই স্থানে টয় ট্রেন একটি গোলাকার পথে চলে, যা পর্যটকদের জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা।
- এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালার অনবদ্য দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
- এখানে একটি যুদ্ধ স্মৃতিসৌধ রয়েছে, যা গুর্খা সৈনিকদের স্মরণে নির্মিত।
৪. সানরাইজ পয়েন্টস
- টাইগার হিল: ঘুম থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে অবস্থিত টাইগার হিল, যা কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মাউন্ট এভারেস্টের সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য বিখ্যাত।
৫. ঘুম জাদুঘর
- দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য জানার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
কীভাবে পৌঁছাবেন ঘুম
বাই রেল
- দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে: টয় ট্রেনের মাধ্যমে দার্জিলিং থেকে ঘুম পৌঁছানো যায়।
- নিকটতম বড় রেল স্টেশন: নিউ জলপাইগুড়ি (NJP), যা ভারতের অন্যান্য বড় শহরের সাথে সংযুক্ত।
বাই রোড
- দার্জিলিং থেকে ঘুম মাত্র ৮ কিমি দূরে। ট্যাক্সি বা শেয়ার জিপ মাধ্যমে সহজেই পৌঁছানো যায়।
বাই এয়ার
- নিকটতম বিমানবন্দর: বাগডোগরা বিমানবন্দর, যা ঘুম থেকে প্রায় ৭০ কিমি দূরে। এখান থেকে ট্যাক্সি বা বাসে ঘুমে পৌঁছানো যায়।
ঘুম ভ্রমণের সেরা সময়
- অক্টোবর থেকে মার্চ: এই সময়ে আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।
- গ্রীষ্মকালেও (এপ্রিল-জুন) ভ্রমণ করা যায়, তবে শীতের তুলনায় ঠান্ডা কম থাকে।
উপসংহার
ঘুম দার্জিলিং ভ্রমণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। যারা পাহাড়ি প্রকৃতি ও শান্ত পরিবেশে সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য ঘুম একটি আদর্শ গন্তব্য।
No comments:
Post a Comment