দার্জিলিংয়ের পিস প্যাগোডা: একটি শান্তির প্রতীক
দার্জিলিংয়ের পিস প্যাগোডা, যাকে বাংলায় শান্তি স্তূপ বলা হয়, এটি দার্জিলিংয়ের অন্যতম বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। এটি একটি বৌদ্ধ স্তূপ, যা বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক। জাপানি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নিচিদাতসু ফুজি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই প্যাগোডাটি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত অনেক পিস প্যাগোডার একটি। এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৯২ সালে, এবং এটি দার্জিলিংয়ের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে অবস্থিত।
ইতিহাস ও নির্মাণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জাপানের নিপ্পনজান মিয়োহোজি সংগঠন শান্তি স্তূপ নির্মাণ শুরু করে। দার্জিলিংয়ের পিস প্যাগোডার নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৭২ সালে এবং শেষ হয় ১৯৯২ সালে। স্তূপটি নির্মাণে ফুজি গুরুজি'র নেতৃত্ব ছিল। এই প্যাগোডার প্রতিটি অংশে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা ফুটে উঠেছে।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
- প্যাগোডাটি উজ্জ্বল সাদা রঙের এবং প্রায় ২৮.৫ মিটার উঁচু।
- এর চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন বৌদ্ধ ভাস্কর্য, যা বুদ্ধের জীবনের নানা দিক তুলে ধরে।
- স্তূপের চারপাশে গৌতম বুদ্ধের স্বর্ণালী মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, যা বুদ্ধের বিভিন্ন অবস্থার (মেডিটেশন, জন্ম, বোধিলাভ) প্রতীক।
- প্যাগোডার আশপাশের এলাকা সবুজ চা বাগান ও পাহাড়ঘেরা, যা এক অপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি করে।
প্রার্থনা এবং শান্তি বার্তা
প্যাগোডার পাশে রয়েছে নিপ্পনজান মিয়োহোজি বৌদ্ধ মন্দির, যেখানে প্রতিদিন শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য প্রার্থনা হয়। পর্যটকরা এখানে এসে প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেন এবং আধ্যাত্মিক শান্তি অনুভব করতে পারেন।
কীভাবে পৌঁছাবেন?
- রেলপথে: দার্জিলিংয়ের নিকটবর্তী রেলস্টেশন হল নিউ জলপাইগুড়ি (NJP)। সেখান থেকে গাড়ি বা টয় ট্রেনে দার্জিলিং পৌঁছানো যায়।
- বিমানপথে: নিকটতম বিমানবন্দর হল বাগডোগরা বিমানবন্দর, যা দার্জিলিং থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে।
- রাস্তা পথে: সড়কপথে সিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পৌঁছানো সহজ। সেখান থেকে ট্যাক্সি বা শেয়ার জিপে পিস প্যাগোডায় যাওয়া যায়।
দর্শনের সেরা সময়
পিস প্যাগোডা দর্শনের সেরা সময় হল:
- মার্চ থেকে জুন: আবহাওয়া মনোরম এবং দার্জিলিংয়ের সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার আদর্শ সময়।
- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর: এই সময়ে আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং প্যাগোডা ও চারপাশের পরিবেশ আরও সুন্দর দেখায়।
উপসংহার
দার্জিলিংয়ের পিস প্যাগোডা শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক স্থান যা শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দেয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধ্যাত্মিকতা, এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতির মেলবন্ধন হিসেবে এটি প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটককে আকর্ষণ করে। শান্তি ও নির্জনতার খোঁজে থাকা মানুষের জন্য এটি একটি আদর্শ গন্তব্য।
No comments:
Post a Comment