Saturday, December 28, 2024

Coochbehar palace history and how to reach there

 কোচবিহার প্যালেস 




কোচবিহার প্যালেস, যা রাজবাড়ি নামেও পরিচিত, পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন। এটি কোচবিহারের রাজাদের শাসনকালে নির্মিত এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটনস্থল। রাজবাড়িটি ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ কর্তৃক নির্মিত হয়, যার নকশা প্রভাবিত হয়েছিল ইউরোপীয় ইতালীয় রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীতে। প্রাসাদটি তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশের ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যধারার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত।  


রাজবাড়ির স্থাপত্যশৈলী ও এর বিশালতা এর অন্যতম আকর্ষণ। এটি লাল ইটের তৈরি একটি চারতলা প্রাসাদ, যা প্রায় ৫১,৩০৯ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ভেতরে রয়েছে রাজাদের ব্যক্তিগত বাসস্থান, মহারানীর প্রার্থনাকক্ষ, দরবার হল এবং অন্যান্য রাজকীয় কক্ষ। প্রাসাদের চতুর্দিকে রয়েছে সুশোভিত বাগান এবং বিভিন্ন ভাস্কর্য, যা একসময় রাজ্যের মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।  

কোচবিহার প্যালেসের ইতিহাস সরাসরি কোচবিহার রাজ্যের সাথে সম্পর্কিত। ১৬ শতকের শুরুতে কোচবিহার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজা বিশ্ব সিংহ। এই রাজ্যটি প্রাচীন কামতাপুর রাজ্যের একটি অংশ ছিল এবং এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের শাসনামলে রাজবাড়িটি নির্মাণ করা হয়, যা রাজ্যের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। 

বর্তমানে কোচবিহার রাজবাড়ি ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (ASI)-এর অধীনে সংরক্ষিত একটি ঐতিহাসিক স্মারক। প্রাসাদটি এখন একটি সংগ্রহশালা (মিউজিয়াম) হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রদর্শিত হয় প্রাচীন চিত্রকলা, মুদ্রা, অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য রাজকীয় সামগ্রী। এটি পর্যটকদের কাছে ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় স্থান।  

কোচবিহার রাজবাড়ি শুধু একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়; এটি উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ অতীতের সাক্ষী।


কোচবিহার প্যালেস বা রাজবাড়ির ভেতরে বহু দর্শনীয় স্থান এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এই প্রাসাদটি শুধুমাত্র এর স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত নয়, এর অভ্যন্তরীন বিভিন্ন অংশও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। নিচে এর উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় দিকগুলো তুলে ধরা হলো:

1. দরবার হল

- এটি রাজবাড়ির অন্যতম কেন্দ্রীয় কক্ষ, যেখানে রাজা তাঁর প্রশাসনিক বৈঠক করতেন।

- দরবার হলের ছাদ এবং দেয়ালে জটিল কারুকাজ করা আছে, যা ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর প্রভাব দেখায়।

- এখানে বিভিন্ন রাজকীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হতো, যা অতীতের ঐতিহ্য এবং শাসনের সাক্ষী।


২. মহারানীর প্রার্থনাকক্ষ

- মহারানীর জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি প্রার্থনাকক্ষ।

- এখানে রাজ পরিবারের আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালিত হতো।


3. রাজাদের ব্যক্তিগত বাসস্থান

- রাজাদের শয়নকক্ষ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত কক্ষগুলি রাজকীয় জীবনযাত্রার পরিচয় বহন করে।

- প্রাসাদের অভ্যন্তরের সজ্জা, আসবাবপত্র, এবং রাজাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।


৪. সংগ্রহশালা (মিউজিয়াম)

- বর্তমানে প্রাসাদটি একটি সংগ্রহশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

- এখানে প্রদর্শিত হয়:

  - রাজ পরিবারের ব্যবহৃত মুদ্রা, অস্ত্রশস্ত্র, এবং রাজকীয় পাত্রাদি।

  - প্রাচীন চিত্রকলা এবং রাজাদের পোর্ট্রেট।

  - ঐতিহাসিক নথি এবং বিভিন্ন সামগ্রী, যা কোচবিহার রাজ্যের ইতিহাসের গল্প বলে।


৫. প্যালেসের ভেতরের কারুকাজ

- প্রাসাদের দেয়াল এবং ছাদে রয়েছে জটিল কারুকাজ এবং ভাস্কর্য।

- প্রতিটি ঘরে রয়েছে নকশাযুক্ত জানালা এবং দরজা, যা রাজবাড়ির স্থাপত্যশৈলীকে অনন্য করে তোলে।


 ৬. সুশোভিত বাগান

- রাজবাড়ির চারপাশে বিস্তৃত বাগান, যেখানে ফুলের শোভা এবং সবুজ পরিবেশ মনোমুগ্ধকর।

- বাগানের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভাস্কর্য এবং ফোয়ারা, যা রাজকীয় সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।


 ৭. ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যশৈলী

- পুরো প্রাসাদটি ভিক্টোরিয়ান এবং ইতালীয় রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত, যা এর অন্যতম আকর্ষণ।

- গোলাকার গম্বুজ, প্রশস্ত করিডোর এবং সুসজ্জিত সিঁড়ি প্রাসাদটিকে অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।

 ৮. রাজকীয় সংগ্রহ

- প্রাসাদের বিভিন্ন অংশে রাজকীয় পোশাক, গহনাপত্র, এবং অন্যান্য ব্যবহৃত সামগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে।

- এই সংগ্রহ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং কোচবিহারের সমৃদ্ধ অতীতকে তুলে ধরে।

৯. ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য শিক্ষা

- প্রাসাদটি কোচবিহারের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির একটি জীবন্ত নিদর্শন।

- এটি শুধু দর্শনীয় স্থান নয়, বরং শিক্ষামূলকও বটে, যেখানে ইতিহাসপ্রেমীরা রাজ পরিবারের জীবনযাত্রা এবং শাসনের ধরণ সম্পর্কে জানতে পারেন। 

১০. ভ্রমণকারীদের জন্য নির্দেশনা

- প্রাসাদের অভ্যন্তরে গাইড সুবিধা রয়েছে, যা পর্যটকদের ইতিহাস এবং স্থাপত্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য প্রদান করে।

- দর্শনার্থীরা ছবি তোলার সুযোগ পান, তবে নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে ফ্ল্যাশ ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ।

কোচবিহার প্যালেস শুধু একটি প্রাসাদ নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং রাজকীয় সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

কিভাবে যাবেন

কোচবিহার প্যালেসে পৌঁছানোর জন্য কয়েকটি উপায় রয়েছে, যা সহজ এবং সুবিধাজনক। নিচে বিভিন্ন উপায় দেওয়া হলো:  

 ১. ট্রেনের মাধ্যমে

কোচবিহার শহরে একটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে, যা ভারতের প্রধান শহরগুলির সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। আপনি কলকাতা, শিলিগুড়ি বা ভারতের অন্য যেকোনো বড় শহর থেকে ট্রেনে কোচবিহারে পৌঁছাতে পারেন।  

- কোচবিহার রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাজবাড়ি খুব কাছে (প্রায় ২-৩ কিমি)। আপনি রিকশা বা ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি রাজবাড়িতে পৌঁছে যেতে পারবেন।  

 

২. বাসের মাধ্যমে

কোচবিহারে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সরাসরি বাস পরিষেবা রয়েছে।  

- শিলিগুড়ি থেকে নিয়মিত বাস পাওয়া যায়, যা প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে কোচবিহারে পৌঁছে দেয়।  

- কোচবিহার শহরের বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশা বা ট্যাক্সি নিয়ে সহজেই রাজবাড়ি যেতে পারবেন।  


৩. ফ্লাইটের মাধ্যমে

কোচবিহারের নিকটতম বিমানবন্দর হল বাগডোগরা বিমানবন্দর (শিলিগুড়ি), যা প্রায় ১৪০ কিমি দূরে অবস্থিত।  

- বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে কোচবিহার যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি বা বাস পাওয়া যায়।  

৪. নিজস্ব যানবাহনে

আপনি যদি নিজের গাড়ি বা বাইক নিয়ে যাত্রা করেন, তাহলে শিলিগুড়ি থেকে জাতীয় সড়ক (NH27) ধরে কোচবিহার পৌঁছানো যাবে। রাস্তা খুব ভালো এবং যাত্রা উপভোগ্য।  

কোচবিহার শহরে পৌঁছানোর পর রাজবাড়ি খুব কাছেই অবস্থিত এবং শহরের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় এটি খুঁজে পাওয়া সহজ। স্থানীয় রিকশা বা ট্যাক্সি ব্যবহার করেই আপনি সহজে পৌঁছে যেতে পারবেন।


1 comment:

   ডলগাঁও ভিউ পয়েন্ট ডলগাঁও ভিউ পয়েন্ট  পশ্চিমবঙ্গের  কালিম্পং জেলার  একটি মনোরম পর্যটন স্থান, যা তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মনোরম প...